হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীর হয়ে কারাভোগকারী সেই মিনুকে নিয়ে করা আপিল উপস্থাপনের পর তা আমলে নিয়ে শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এই শুনানি হতে পারে।
এর আগে বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে বুধবার (৩১ মার্চ) উপস্থাপন করা হলে আদালত বলেন, বৃহস্পতিবার বিষয়টি কার্যতালিকায় আসবে। সে হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার আপিলটি আদেশের জন্য বেঞ্চের কার্যতালিকায় ২৭ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।
শুনানিতে বুধবার ফৌজদারি আপিলের মেনশন স্লিপ (আপিলের নম্বর সম্বলিত) দিতে চাচ্ছেন জানিয়ে আদালতে আপিলকারী তথা মিনুর পক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির বলেন, একজন কুলসুমীর পরিবর্তে আরেকজন নিরপরাধ নারী যাবজ্জীবন দণ্ডিত আসামি হিসেবে দুই বছর নয় মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন।
এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এটি কি আপিল হবে?’ তখন শিশির মনির বলেন, ‘যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন। তদন্তে এসেছে ওই মামলায় যিনি জেল খাটছেন, তিনি ওই ব্যক্তি নন, তিনি ভিন্ন মানুষ। এ বিষয়ে নিম্ন আদালতের মতামতসহ উচ্চ আদালতে একটি চিঠিসহ নথিও এসেছে। প্রয়োজনীয় আদেশের জন্য মেনশন স্লিপ দাখিল করতে চাই।’ আদালত বলেন, ‘মেনশন স্লিপ পাঠিয়ে দিন, আজ (বৃহস্পতিবার) মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসবে।’
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (৪র্থ আদালত) বিচারক শরীফুল আলম ভূঁঞার পাঠানো চিঠিসহ ওই মামলা-সংশ্লিষ্ট উপনথি গত ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছায়।
মামলা (নিষ্পত্তি হওয়া দায়রা মামলা-৫৯০/২০০৮) ও ফৌজদারি আপিল নম্বর (৪২৯৩/২০১৯) উল্লেখ করা ওই চিঠির শেষাংশের উল্লেখ আছে, প্রয়োজনীয় নির্দেশনার জন্য হাইকোর্টে উপস্থাপনের জন্য নথি পাঠানো হলো।
জানা যায়, মোবাইল ফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাজা হওয়ার আগে প্রকৃত আসামি কুলসুম ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর কারাগারে আসেন।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (চতুর্থ আদালত) আদালত থেকে ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান কুলসুম। ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমী সেজে মিনু আক্তার আত্মসমর্পণ করে কারাগারে আসেন। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে কুলসুম হিসেবে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। এই আপিল আজ হাইকোর্টের কার্যতালিকায় রয়েছে।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ড পরিদর্শনের সময় কুলসুমের বদলে মিনুর সাজা খাটার বিষয়টি জেনে রেজিস্ট্রারের ছায়ালিপিসহ ২১ মার্চ চট্টগ্রামের আদালতে একটি আবেদন দেন চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার (চলতি দায়িত্ব) মো. শফিকুল ইসলাম খান। এরপর ২২ মার্চ হাজিরা পরোয়ানামূলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ (চতুর্থ আদালত) শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে মিনুকে হাজির করা হয়।
সেদিন মিনুর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করা হয়। মিনুর বক্তব্য অনুসারে, মর্জিনা নামের এক নারী তিন বছর আগে ডাল-চাল দেবেন বলে তাকে ঘর থেকে নিয়ে এসে জেলে ঢুকিয়ে দেন। তখন তিনি ভাসমান বস্তিঘরে ছিলেন।
মর্জিনা বলেছিলেন, রোজার পর তাকে জেল থেকে বের করবেন। তিনি এখন বের হতে চান। কুলসুমকে (প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি) তিনি চেনেন না বলে জানান। ২২ মার্চ চট্টগ্রামের আদালত মূল রেজিস্ট্রার ২৩ মার্চ আদালতে দাখিল করতে চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে নির্দেশ দেন।
রেজিস্টারে থাকা আসামি কুলসুম আক্তার ওরফে কুলসুমীর ছবির (২০০৭ সালের ২৬ অক্টোবর) সঙ্গে বর্তমান আসামি (মিনুর) ছবির অমিল পাওয়া যায়। এরপর ধার্য তারিখ ২৩ মার্চ চট্টগ্রামের আদালত জরুরি ভিত্তিতে ওই উপনথি হাইকোর্টে পাঠাতে আদেশ দেন।